১৯৯২ সালে সিস্টার অভয়া হত্যা মামলায় সিস্টার সেফির ভার্জিনিটি টেস্টের ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল হয়েছিল।
দিল্লি হাইকোর্ট
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সত্য খোঁজার নামে কোনও অভিযুক্ত মহিলার কুমারীত্ব পরীক্ষা (Virginity Test) 'অমানবিক' এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বলে জানিয়ে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। দিল্লি হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানায়, তদন্তের মধ্যে ‘সত্য উদ্ঘাটনের নামে’ কোনও অভিযুক্ত বা আটক হওয়া মহিলার ভার্জিনিটি টেস্টে কুমারীত্ব যাচাই করার পদক্ষেপ অংসবিধানিক।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে সিস্টার অভয়া হত্যা মামলায় সিস্টার সেফির ভার্জিনিটি টেস্টের (Virginity Test) ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল হয়েছিল। সেই মামলা ওঠে দিল্লি হাইকোর্টে। সেই মামলা সম্পর্কেই এই পর্যবেক্ষণ। মামলাটিতে রায় দেন বিচারপতি স্বর্ণকান্তা শর্মা। বিচারপতি জানান, এমন পরিস্থিতিতে এই টেস্ট সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ এর বিধিকে লঙ্ঘন করছে। তিনি বলেন, "অভিযোগের জেরে সত্য পর্যন্ত পৌঁছানোর নামে অনুচ্ছেদ ২১ এর অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়েছে।" এই বিধিতে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। হাইকোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, এর ফলে সিস্টার সেফির মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। সিস্টার সেফির বিরুদ্ধে যে ফৌজদারী মামলা চলছে তা শেষ হলে যাতে তিনি এই টেস্টের নিরিখে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন, তার অধিকার দিয়েছে কোর্ট।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে কেরলের কোট্টায়ামে খুন হন সিস্টার অভয়া নামে এক সন্ন্যাসিনী। তাঁর দেহ, সেই এলাকাতেই অবস্থিত সেন্ট পায়াস টেন্থ কনভেন্টের কুয়ো থেকে পাওয়া যায়।
১৯৯২ সালের ২৭ মার্চের সেই খুনকে প্রথমে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছিল কেরল পুলিশের (Virginity Test)। ২০ বছর বয়সী শিক্ষানবিশ ওই সন্ন্যাসিনীর মৃত্যুতে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায় সেই সময়। কীভাবে মারা গেলেন তা নিয়ে ছিল প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর অভিযুক্ত হিসাবে নাম উঠে আসে সিস্টার সেফির। মামলার দায়িত্ব পায় সিবিআই। সেই সময় অভিযুক্তের ভার্জিনিটি টেস্ট করার অনুমতি দেয় আদালত। দেখা যায়, সন্ন্যাসিনী হওয়া সত্ত্বেও সেফি কুমারী নন। তদন্তে জানা যায়, ফাদার কোট্টুর সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তা অভয়া জানতে পেরে যান। আর তাতেই এই হত্যা বলে, সন্দেহ করা হয়। চলে তদন্ত। ফাদার কোট্টুকেও অভিযুক্ত করে আদালত।
আরও পড়ুন: ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে সিবিএসই পরীক্ষা, কবে পাওয়া যাবে অ্যাডমিট?
২০২০ সালে এক বিশেষ সিবিআই আদালত সিস্টার সেফিকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মূলত, সিস্টার সেফির ভার্জিনিটি টেস্টের ভিত্তিতেই, ফাদার কোট্টুরের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক প্রমাণ হয়েছিল আদালতে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে কেরল হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন সিস্টার সেফি। উচ্চ আদালত আপাতত তাঁর সাজা স্থগিত রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। এর পাশাপাশি ২০০৯ সালে, তদন্ত চলাকালীন তার ভার্জিনটি টেস্ট (Virginity Test) করাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সিস্টার সেফি। এদিন সেই মামলারই রায় দিল দিল্লি হাইকোর্ট। যে ভার্জিনিটি টেস্টের ভিত্তিতে সিস্টার সেফিকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল সিবিআই আদালত, সেই প্রক্রিয়াটিই অসাংবিধানিক বলে জানিয়ে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। কাজেই, এই দিনের রায় কেরল হাইকোর্টে চলা মূল মামলার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।